প্রথম পর্ব
জন্ম ও শৈশব
গাজা উপত্যকার সমুদ্র তীরে অবস্থিত একটি শরণার্থী শিবির। ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখটি ছিল ১৯৬২ বা ৬৩ সালের ২৩ শে জানুয়ারি। ফিলিস্তিনের আসকালান শহরের আল জৌরা গ্রাম থেকে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া একটি সাধারণ পরিবারে এদিন জন্মগ্রহন করে একটি শিশু। শিশুটির পিতা-মাতা তাদের সন্তানের নামরাখেন ইসমাইল হানিয়া। কে জানত তখন? শরনার্থী শিবিরে জন্ম গ্রহণ করা এই শিশুটিই একদিন হয়ে উঠবেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক। এমনটি কেউ হয়তো তখন কল্পনাই করেনি। শরণার্থী শিবির আর সমুদ্রের কোলে বেড়ে ওঠেন শিশু ইসমাইল হানিয়া। দিন গড়াতে গড়াতে একদিন পড়াশোনার বয়সে পৌছে যান শিশু ইসমাইল হানিয়া। খেলাধুলায় সার্বক্ষণিক মত্ত থাকা ছেলেটি তখন পরিণত হয়ে যায় পুরোদস্তুর পড়ুয়া ছেলেতে।
শিক্ষাজীবন
ইসমাইল হানিয়ার পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় অন্য আর দশটি ফিলিস্তিনি শিশুর মতোই জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউ)দ্বারা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোয় পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়তে। এরপর আল আজহার ইনস্টিটিউট থেকে তিনি হাইস্কুল ডিগ্রি অর্জন করেন। হাইস্কুল ডিগ্রি অর্জনের পর ইসমাইল হানিয়া ১৯৮৭ সালে গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রীড়া কার্যক্রমেও প্রচুর আগ্রহ ছিলো ইসমাইল হানিয়ার।কিন্তু ইসমাইল হানিয়া যে বছরআরবি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ঠিক সে বছরইপুরো ফিলিস্তিনজুড়ে শুরু হয় ইতিহাসবিখ্যাত ইন্তিফাদা। যার প্রভাব তরুণ ইসমাইল হানিয়ার ভিতরেও সঞ্চারিত হয়। ফলাফলস্বরূপ,ইসমাইল হানিয়া জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে।এবং ১৯৮৭ সালেই তিনি শায়খ আহমাদ ইয়াসীন কতৃক প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের কার্যালয় প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও তিনি ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র থাকা কালীন ছাত্র ইউনিয়ন কাউন্সিলের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এবং ১৯৯২ সালে তিনি এই সংগঠনের ডিন নির্বাচিত হন।১৯৯৪ সালে তিনি ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ইসলামিক বিভাগের প্রধান হন।
রাজনৈতিক জীবন ও কারাবরণ
রাজনীতি ও কারাগার একই সামন্তরালে থাকে কথাটি সব অঞ্চলের রাজনীতিতেই একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়। ইসমাইল হানিয়াও তার রাজনৈতিক জীবনে তিন তিনবার কারাবরণ করেছিলেন। ১৯৮৭ সালেই ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার পরপরই ইসরায়েলী ধরপাকড়ে তিনি আঠার দিনের জন্য কারারুদ্ধ হন। এরপর ১৯৮৮ সালে আবার তিনি ইসরায়েল পুলিশ কতৃক গ্রেপ্তার হন।এবং ছয় মাস তিনি কারাগারে কাটান।১৯৮৯ সালে হামাসের সাথে জড়িত থাকার মত গুরুতর অভিযোগে তিনি আবার কারারুদ্ধ হন। এবং তিন বছর আটক থাকার পর দক্ষিণ লেবাননের মার্জ আল জোহর অঞ্চলে দখলদার ইসরায়েল কতৃক নির্বাসিত হন। এবং ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার এক বছর পর তিনি গাজা উপত্যকায় ফিরে আসতে সক্ষম হন।২০০৬ সালের জানুয়ারির প্রথমদিকে ফিলিস্তিনে আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।ওই নির্বাচনে হামাস নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে সেবছরের ফেব্রুয়ারিতে একদলীয় সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়।উক্ত সরকারেরও প্রধান নির্বাচিত হন ইসমাইল হানিয়া।
ইসমাইল হানিয়ার রাজনৈতিক পলিসি
রাজনৈতিক পলিসি নির্ধারনে ইসমাইল হানিয়া সবসময় ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের কথা বেশি ভাবতেন।এবং তিনি সর্বদা ফিলিস্তিনের বর্তমান ক্ষমতাসীন কতৃপক্ষ ফাতাহের সাথে দুরত্ব নিরসনে সচেষ্ট ছিলেন।
হামাস প্রধানরূপে ইসমাইল হানিয়া
২০১৭ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় আয়োজিত এক ভিডিও কনফারেন্সে হামাসের নীতিনির্ধারনী কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন।তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির তথ্যমতে,২০১৭ সালের সেই কনফারেন্সে হামাসের তুখোর নেতা মুসা আবু মারজুক,হামাসের ডেপুটি খালেদ মিশাল,হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাজ্জালকে টপকে ইসমাইল হানিয়া এই গুরুদায়িত্ব লাভ করেন।
সূত্র: আল জাজিরা
আগামীকাল পড়বেন দ্বিতীয় পর্ব
0 Comments